সিএন ডেস্ক :: সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সিংহভাগ কাজ পেয়ে যাচ্ছে ‘মুষ্টিমেয়’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর তা ঘটছে বিদ্যমান দরপত্র প্রক্রিয়ার নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই। এতে করে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন ছোট ঠিকাদাররা। তেমনি একই ঠিকাদার একাধিক কাজ করার ফলে কাজের গুণগত মান থেকে শুরু করে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারার মতো ঘটনা ঘটছে।
এ সমস্যা এড়াতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারদের কাজ দেয়ার শর্ত সংশোধন করেছে সওজ অধিদপ্তর।
সংশোধিত শর্ত অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো উন্নয়নকাজের একটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ৩৫ কোটি টাকার বেশি হলে এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপ্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। একইভাবে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স (মেয়াদভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ) কাজের ক্ষেত্রে কোনো প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি হলে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
এ পদ্ধতিতে ঠিকাদারদের তিনটি খাম ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে একটি খামে থাকবে কারিগরি প্রস্তাব। আর্থিক প্রস্তাব থাকবে আরেকটি খামে। এরপর খাম দুটি আরেকটি খামের মধ্যে দিয়ে দরপত্র দাখিল করতে হবে। দরপত্র মূল্যায়নের সময় প্রথমে ঠিকাদারের কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হবে। কারিগরি প্রস্তাবে যেসব ঠিকাদারের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে, কেবল তাদেরই আর্থিক প্রস্তাবের খাম মূল্যায়ন করা হবে।
এতদিন ঠিকাদাররা কোনো কাজ পাওয়ার জন্য একটি খামে দরপত্র প্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাব মূল্যায়নের সময় ঠিকাদারদের অতীত কাজের অভিজ্ঞতা, সক্ষমতার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেত। সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশ কাজ পেয়ে যেত। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করেছে আগের দরপত্র প্রক্রিয়া। ঠিকাদার চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি ফর্মুলা, পাস্ট পারফরম্যান্স ম্যাট্রিক্স, ১০ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমা বা নিম্নসীমার মতো বিষয়গুলোয় অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা সহজেই কাজ পেয়ে গেছেন।
অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতির কথা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এ উল্লেখ আছে। অধিদপ্তরের অধিকাংশ কাজ মুষ্টিমেয় সংখ্যক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়ে যাচ্ছে। এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ সমস্যা অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব হবে। দরপত্রের এ-সংক্রান্ত শর্ত সংশোধন করে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে সওজ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের ছোট ঠিকাদারদের সুযোগ করে দিতে যেসব প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ৩ কোটি টাকার কম, সেগুলো সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ার (এলটিএম) মাধ্যমে সম্পন্নের সুপারিশ করেছে সওজ অধিদপ্তর। সুপারিশটি অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এতে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত উন্নয়নকাজ এলটিএমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের প্রকিউরমেন্ট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাব্বীর হাসান খান বলেন, উন্নয়নকাজে আরো বেশিসংখ্যক ঠিকাদারকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দরপত্রের শর্তে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। আরো কিছু বিষয় সংশোধনের কাজটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সওজ অধিদপ্তরের সারা দেশে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া ঠিকাদারের সংখ্যা ৮৪৫। এর মধ্যে বর্তমানে দেশী-বিদেশী ২৩২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলে ২২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার কাজ করছে। এর অর্ধেক অর্থাৎ ১১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন সাতটি ঠিকাদার। আর শীর্ষ ২০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব মিলিয়ে বাস্তবায়ন করছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ। অবশিষ্ট সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ ভাগাভাগি করে বাস্তবায়ন করছে ২১২টি প্রতিষ্ঠান।
প্রকৌশলীরা বলছেন, একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঠিকাদাররা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে পড়েন। এতে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষও হয় না। এসব কারণে সময় অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও বাড়ে। এজন্য ঠিকাদারদের তালিকা প্রস্তুত ও সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সওজ অধিদপ্তরে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের সক্ষমতা, যন্ত্রপাতি, জনবল ইত্যাদি বিষয়ের তথ্য প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে সংরক্ষণ করা হবে। এ কাজ সওজ অধিদপ্তর এরই মধ্যে করে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন প্রকিউরমেন্ট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাব্বীর হাসান খান।
তিনি বলেন, সমস্যা হলো অন্য কয়েকটি সংস্থায় এ রকম তালিকা নেই। এতে অধিদপ্তরের বাইরে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কিনা তা আমরা জানতে পারি না। ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ গোপন করার প্রবণতাও রয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।বণিক বার্তা
পাঠকের মতামত: